পোশাকে আভিজাত্য -শওকতুর রহমান (প্রথম খন্ড)

পোশাকে আভিজাত্য: (প্রথম খন্ড)

পোশাকে আভিজাত্য

পোশাক হলো মানুষের রুচি,ব্যাক্তিত্ব ও সংস্কৃতির পরিচয়। একজন মানুষ কতটা রুচিশীল তা তার কথাবার্তার পাশাপাশি রুচিবোধের পরিচয় পাওয়া যায় তার পোশাকে।


পোশাকের গুরুত্ব নিয়ে বাস্তব কিছু কথা আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরব।

মিডিলইষ্টে থাকি আজ অনেক বছর ধরে সেই সুবাদে বেশ কয়েকবার দেশে যাওয়া আসা হয়েছে, একটি জিনিস বেশ খারাপ লাগে দেখতে আর তা হলো পোশাকের ব্যাপারে আমরা বাঙালীরা খুবই অসচেতন বিশেষ করে আমরা যারা মিডিলইষ্টে থাকি। এর কারণ খুঁজে বের করতে গিয়ে দেখা গেছে বেশীর ভাগ তারাই যারা মুলত কাজ করে ভিবিন্ন মাজরায় (ফসল বা খেজুরের বাগানে) অল্প শিক্ষিত মানুষ তাই হয়তো তারা এ ব্যাপারে একেবারেই উদাসিন তবে এককভাবে তাদের দোষারোপ করে লাভ হবে না প্রবাসে আসার আগে যে ট্রেনিং হয় তাতে পোশাক সম্পর্কে ধারণা দেওয়া প্রয়োজন, আবার অনেককেই পাওয়া যায় যারা ভাল কাজ করছেন ভাল পরিবেশে থেকেও পোশাকের ব্যাপারে একেবারেই অসচেতন,পরনের প্যান্টের সাথে শার্ট কেমন হওয়া চাই বা জুতা কেমন পরা উচিত সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই, এমন একটি শার্ট পরেছেন শার্টের কারণে প্যান্ট দেখা যাচ্ছেনা এত লম্বা শার্ট আবার পায়ে এক জোড়া পুরনো জুতো ধুলা বালি লেগে আছে, কাপড় বা জুতো পুরনো হলে সমস্যা ছিল না সমস্যাটা হলো তা পরিস্কার করে পরা উচিৎ আবার লক্ষ্যে করলে দেখবেন পকেটে বেনসন বা গোল্ডলিপের প্যাকেট তাতে বুঝা যায় পয়সার সমস্যা নয় এটা আমাদের রুচির সমস্যা, আসলে এটা নিয়ে সচেতনতা দরকার একজন ইন্টারন্যাশনাল পেসেঞ্জার বা একজন প্রবাসী হিসেবে আপনি আপনার দেশকে প্রেজেন্ট করছেন তাছাড়া এয়ারপোর্টে ভিবিন্ন দেশের মানুষের সাথে মিশতে হয় এই একটি ভাল শার্ট,প্যান্ট বা জুতা খুব বেশী টাকার প্রয়োজন নেই খুবই সামান্য টাকায় হয়ে যায় যা কারো কারো এক সপ্তাহে সিগারেটের পিছনে খরচ হয়, অন্যদিকে লক্ষ্যে করলে দেখা যায় একই কাজ করা ইন্ডিয়ান বা পাকিস্তানিরা পোশাকের ব্যাপারে বেশ সচেতন বেশ পরিপাটি।

   

ভাল রুচিশীল পোশাক ও আমাদের সমস্যা:

কিছু রুচিসম্পন্ন মানুষ আছেন দেশে যাবার সময় ভাল ব্যান্ডের পোশাক বা অনেকেই কোট টাই পরেন এটা রুচির পরিচয় তবে এতে কিছু মানুষের চুলকানি শুরু হয় হয়তো তারা ভাবেন নিম্নমাণের কাজ করে দেশে যেতে এত ফুটানির কি দরকার, উন্নত দেশে এসেও অনেক মানুষ পাওয়া যায় যাদের মানসিক কোন পরিবর্তন হয়নি তারা বুঝতে চায় না যে উন্নত দেশে কাজের কোন প্রকারভেদ থাকেনা কাজ কাজই। এমন মানুষকে উদ্দ্যশ্যে করে আমার এই লেখা, বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে এই লেখাটি পড়লে হয়তো আপনি অনুধাবন করতে পারবেন ড্রেসআপের গুরুত্ব কতটুকু যাইহোক মানুষের এসব কথা মাথায় রেখে পোশাকের ব্যাপারে আমি তেমন একটা সচেতন ছিলাম না বলতে পারেন ইগনোরই করতাম। 


পোশাকের মর্যাদা:

শেখ সাদীর গল্পটা অনেকেই পড়েছেন পোশাকের কারনে সম্মানীত হয়েছিলেন এটা অনেকেরই জানা তাই আর এই গল্পটা আর নাই বললাম। এবার মুল কথায় আসা যাক, গত দুই বছর আগে আমি শীত মৌসুমে দেশে ছুটিতে যাই আসার সময় বেশ ঠান্ডা থাকায় আমার হোম মিনিষ্টার একরকম জোড়াজুড়ি করেই শশুর বাড়ি থেকে পাওয়া কোটটা আমাকে পড়িয়ে দিলেন কি আর করা একদিকে ঠান্ডা অপরদিকে শশুরবাড়ির কোট আর যাইহোক এটাকে অবমাননা করা মানে যুদ্ধকে আহবান করার সামিল নিতান্ত অনিচ্ছায় পড়তেই হলো সাথে একটা কলমও গিফট পেলাম।এয়ারপোর্টে এসে যথারীতি বোর্ডিং কার্ডের জন্য লাইনে দাঁড়ালাম লাইন তার নিয়মেই এগুতে থাকলো একটা সময় আমার সিরিয়াল আসলো সঙেগ থাকা লাগেজ জমা দিয়ে বোডিং কার্ড নেয়ার সময় একজন ভদ্র মহিলা (কাষ্টমস অফিসার) আমার টিকেট হাতে নিয়ে সিল মারতে যাবেন এমন সময় আমার দিকে তাঁকিয়ে বললেন আপনাকে ফাষ্টক্লাসের সিট দিলে আপনার কোন আপত্তি নেইতো মনে মনে ভাবলাম এতো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি বলাবাহুল্য আমার ইকোনমি ক্লাসের টিকেট ছিল। ফাষ্টক্লাসের টিকেট ক্যারি করা আমার পক্ষে সম্ভব নয় তুলনামুলক ইকোনমি ক্লাসের টিকেটের দিগুন মুল্যে পে করতে হবে, তো আমি ফাষ্টক্লাসের টিকেটের মুল্য পে করতে অপারগতা প্রকাশ করলাম উনি হেসে দিয়ে বলতেন এর জন্য আপনাকে এক্সটা কোন পে করতে হবে না শুনে বেশ খুশি হলাম এতো আমার জন্য সোনার সোহাগা হয়ত অনেকেরই মনে হতে পারে ফাষ্টক্লাস হয়তো খালি যাবে তাই দেওয়া হয়েছে আপনার ধারণা একেবারেই উড়িয়ে দিচ্ছিনা তবে আমার আগে লাইনে ২৫/৩০ জনের মত লোক ছিলেন কাউকেই ফাষ্টক্লাসের টিকেট দেওয়া হয়নি যাইহোক লাগেজ বুকিংয়ে দিয়ে আমি ওয়েটিং রুমের অগ্রভাগে বসে আছি অনেক্ষন বসে থেকে ঘড়ির দিকে তাঁকিয়ে দেখলাম প্রায় আধাঘন্টা এখনো বাকি আছে গ্লাসে বাইরে দেখলাম আমাদের নিতে এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি বিমান দাঁড়িয়ে আছে যাইহোক সবার মধ্যে একটা উদগ্রীব কাজ করছিল কখন গেট খুলবে গিয়ে বসবে কিছুক্ষন পর ঐ ভদ্রমহিলা সামনের গেট দিয়ে এসে আমাকে সামনে বসা অবস্থায় দেখে বললেন আপনাকে না ফাষ্টক্লাসের সিট দেওয়া হয়েছিল আপনি এখানে বসে আছেন কেন? আপনাকে  এখানে লাইনে দাঁড়াতে হবেনা সোজা প্লেনে গিয়ে সিটে বসুন, বেশ বড়লোক বড়লোক একটা ভাব চলে আসল আমি হেঁটে প্লেনে চলে গেলাম ততক্ষন পর্যন্ত ইকোনমি ক্লাস এলাউ করেনি, যাইহোক বিমানের দরজায় যেতেই বিমানবালা অনেক সাদরে আমাকে রিসিভ করলেন বোডিং পাস দেখে আমাকে ফাষ্টক্লাসের আসনটি দেখিয়ে বিনয়ের সাথে আসন গ্রহন করতে বললেন, স্বাভাবিকভাবে বিমানবালারা অনেকটা বিনয়ী হয়ে থাকেন আর যদি হয় এমিরেটস এর মত আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন এয়ারলাইন্স তাহলে তো কথাই নেই, অনেক বড় একটা সিট পেলাম সুইচ দিলে সিটটি মোভিং করে একদম একজনের সিঙেল শোয়ার সিটের মত,বিমানবালাদের অন্যরকম কেয়ারিং ছিল আসেপাশে যারা ছিলেন তাদের দিকে তাঁকিয়ে বুঝলাম এরা কেউ সাধারণ নন বড় বড় বিজনেসম্যান বা ভিআইপি বলা যায় যাইহোক সামনে বড় একটি টেলিভিশন রাখা ছিল বিমানবালা এসে জিজ্ঞেস করলেন অন করবে কিনা বা কি দেখতে পছন্দ করি আমি বললাম এডভান্সার জাতীয় কিছু চালু করতে চালু করে দিয়ে ভদ্রমহিলা চলে গেলেন আমি মনের সুখে  মিশরের পিরামিডের উপর একটি প্রমান্যচিএ দেখতে লাগলাম বেশ ভালই লাগছিল।  কিছুক্ষন পর পর বিমানবালা এসে যেভাবে খাতির যত্ন  করছিল কিছু খাব কিনা কোন পাণীয় চাই কিনা এসব সচরাচর ইকোনমি ক্লাসের ভ্রমণ করা যাত্রী এতটা কেয়ারিংয়ে অভ্যস্ত নই তারপরও ভাল একটা সার্ভিস পাচ্ছি সুযোগটা কাজে লাগানো উচিৎ মেনুটা দেখে সামান্য কিছু অর্ডার করি বেশী কিছু করলে হয়তো ভেবে বসতে পারেন নতুন ফাষ্টক্লাসের যাত্রী এটা কোনভাবেই বুঝতে দেওয়া যাবে না। সিটটাকে ফ্লাট করে টিভি দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতে পারিনি এনাউন্সমেন্ট শুনে ঘুম ভাংলে শুনলাম বিমান আধাঘন্টার ভেতরে ডুবাই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করবে উঠে একটু ফ্রেশ হয়ে নিলাম এখান থেকে সৌদিআরব কানেক্টিং ফ্লাইটে যেতে হবে যা তিন ঘন্টা পর। নামার সময় তারা বেশ সমীহ করে বিনয়ের সাথে বলতে লাগলো  আবারও যেন তাদের এয়ারলাইনস চয়েস করি আমিও ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নেমে আসলাম, মনে মনে কোটকে আর কোটের মালিককে একটা ধন্যবাদ দিলাম ইনজয়েবল একটি ভ্রমণ ছিল।

(প্রথম খন্ড)


দ্বিতীয় খন্ডের লিংক 👇

https://www.kobitagolpo.com/2024/08/blog-post_26.html

Comments

Popular posts from this blog

কবিতা প্রিয় স্বদেশ ফেরা- ভালবাসার বাংলাদেশ

আয়না- কবিতা আয়না

কবিতা- কোটা আন্দোলন