পোশাকে আভিজাত্য -শওকতুর রহমান (দ্বিতীয় খন্ড)
পোশাকে আভিজাত্য : (২য় খন্ড)
যথারীতি এয়ারপোর্টে ওয়েটিং লাউঞ্জে বসে আছি পরবর্তী ফ্লাইটের জন্য যথাসময়ে ফ্লাইট হলো এবং রিয়াদ এসে পোঁছালাম, লাগেজ নিয়ে বাইরে এসে টেক্সির জন্য দাঁড়িয়ে আছি একজন পাকিস্তানি ড্রাইভার আমার কাছে এসে বলল কোথায় যাব আমার গন্তব্যের ঠিকানা বলতেই বলল আমার টেক্সিতে আরো তিনজন যাত্রী আছে তারা ওইখানেই যাবে আমি যদি চাই তাহলে তাদের সাথে যেতে পারি ভাড়া সবাই ভাগ করে দিলেই হবে, তারকথা শুনে গাড়ীর কাছে গিয়ে দেখলাম ঠিক টেক্সি ছিলনা তবে গাড়িটি ভাল গাড়িতে আরো তিনজন লোক বসা ছিল তাদের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম তারা আমার আশেপাশেই যাবে চিন্তা করলাম একা যাওয়ার চেয়ে তাদের সাথে গেলে টাকাও সাশ্রয় হবে সাথে গল্পসল্প করে যাওয়া যাবে, দেশ থেকে এসেছি মনটা এমনিতেই ভাল ছিলনা তো রাজি হয়ে লাগেজটা পিছনে রেখে তাদের সাথে বসলাম আমি সহ চারজন হলো তাই আর দেরী না করে গাড়ি ছেড়ে দিল এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে বেশ কিছুদূর আসার পর হঠাৎ করে অন্য একটি গাড়ি অনেক দ্রুতগতীতে এসে ইন্ডিকেটর দিচ্ছে আমাদের গাড়িটা থামানোর জন্য ভাবলাম হয়তো ড্রাইভারের পরিচিত কেউ হবে কিন্তু যা জানলাম তাতে বেশ ভড়কে গেলাম এরা আসলে ছিনতাইকারী এয়ারপোর্ট থেকে লোক নিয়ে আসে কিছুদুর আসার পর রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে ছিনতাই করে। যাইহোক আমরা বলছিলাম গাড়ি দাঁড় না করাতে কিন্তু ড্রাইভার বলল না দাঁড়ালে পরে ওকে মারধর করবে কি আর করা গাড়ি দাঁড় করতেই ঐ গাড়িটা সামনে এসে দাঁড়ালো দুইটি ছেলে নেমে আসলো এবং সবাইকে নামতে বলল সবাই আমরা আপত্তি করছিলাম এখানে নামব না সামনে বসা লোকটার সাথে বেশ খারাফ আচরণ করছিল আরবী মুটামুটি জানি বলে আমি তাদের সাথে এ নিয়ে কথা বলছিলাম ততক্ষনে সামনে থাকা গাড়ি থেকে আরো দুইজন সৌদি নেমে আসল বুঝতে পারলাম ঠকবাজদের খপ্পরে পরেছি বেশি কথা বললে মেরে টেরে ফেলতে পারে তাই সবাইকে বললাম চেঁচামেচি করে কোন লাভ নেই আগে শুনি ওরা কি চায় এর মধ্যে একজন উচ্চবাক্য করেছিল তাঁকে দুই তিনটা লাগিয়ে দিল যাইহোক গাড়ি থেকে নেমে তাদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম আমাদের কাছে কি চাও আমার দিকে তাঁকিয়ে বেশ ভালো করেই বলল গাড়ি আর যাবে না ড্রাইভারের সাথে ভাড়া যত টাকা নির্ধারণ করা হইছিল মানে একশো রিয়াল তা দিতে তখন আমি বললাম এইটুকু জায়গা একশো রিয়াল তো ভাড়া না শুনে বেশ ভদ্রভাবেই বলল একশোই দিতে হবে তবে তোমাকে যেতে দেব বাকিদের যেতে দেওয়া হবেনা এতো দেখি আরেক বিপদ আমাদের মধ্যে একজন আমার কাছে এসে বলল ভাই সবাই মিলে একশো টাকা দিয়ে দেই তবে দোয়াই আপনার আমাদের ছেড়ে যাবেন না এরা মেরে ফেলবে বললাম চিন্তা করবেন না গেলে সবাই একসাথেই যাব যথারীতি সবাই মিলে একশো টাকা ওরা হাতে দিলাম এবার বলল ঠিক আছে তুমি অন্য একটা ট্যাক্সিতে তুমার লাগেজ নিয়ে চলে যাও এবার আমি বেশ বিনয় হয়ে বললাম ওরা নতুন আসছে বুঝতে পারে নাই তাই খারাপ ব্যাবহার করছে ওদের মাপ করো কিন্তু ওদের একই কথা ওদের যেতে দেওয়া হবে না অনেক অনুনয় বিনয় করে অবশেষে নিস্তার পেলাম ওদের সাথে নিয়েই অন্য একটা ট্যাক্সিতে করে রওয়ানা দিলাম আমার কাছে মনে হয়েছিল এই ঘটনায় ড্রাইভারের হাত আছে,যাইহোক আসতে আসতে একটি কথাই বার বার মনে হচ্ছিল ওরা আমার সাথে ভাল ব্যবহার করার কারণটা কি ছিল অনেকের মনে হতে পারে আমি আরবীতে কথা বলতে পারি সে জন্য আসলে আমার কাছে সেটা মনে হয়নি তার কারণ প্রথমে যখন তারা গাড়ির গেট খুলে ভেতর দেখছিল কথা বলার আগেই আমার প্রতি তাদের ব্যবহারটা বেশ সদয় ছিল মনে মনে আবারো কোট আর কলমকে ধন্যবাদ দিলাম সাথে এর পিছনে যার অবধান তাঁকে। আজ অনেকদিন পর এই কথাগুলো লেখার উদ্দেশ্যে হলো কারো কোট টাই পরা নিয়ে কেউ একজন ব্যাঙগ করছিল আর এই কথাগুলো মনে পড়ে গেল।
পরিশেষে বলতে চাই যে এই দুইটি বাস্তব ঘটনা থেকে আপনারা নিশ্চয় কিছুটা হলেও অনুধাবন করতে পেরেছেন পোশাকের গুরুত্বটি তাই পোশাক নির্বাচনে সচেতনতা জরুরী পাশাপাশি আরেকটি কথা বলতে চাই এয়ারপোর্ট থেকে কখনো পরিচিত না হলে টেক্সি ছাড়া অন্যকোন গাড়িতে যাবেন না আমাদের সাথে আরো অনেক কিছু ঘটতে পারত মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করি,আমি গুছিয়ে লিখতে পারিনা লেখায় ভুলত্রুটি হলে বা কোন কথায় কারো মনে আঘাত করলে ক্ষমাপ্রার্থী।
প্রথম খন্ডের লিংক 👇
https://www.kobitagolpo.com/2024/08/blog-post_16.html
Comments
Post a Comment