প্রবাস জীবনের গল্প- সন্তানের ক্ষেত্রে সতর্কতা

সন্তানের ক্ষেত্রে প্রবাসী বাবাদের আরো সতর্ক থাকা উচিত:

টেলিফোনে বাবার কাছে ছেলের বাইসাইকেলের বায়না শুনেই একেবারে গদগদ হয়ে ছেলের মাকে বলেই দিলেন ভাল দেখে একটা সাইকেল কিনে দিতে। ছেলের সাথে কথা বলছিলেন পাশে বসেই তাই তাদের কথোপকতন শুনছিলাম ফোন শেষ হতেই আমার দিকে তাঁকিয়ে বললেন অনেক জেদি ছেলে যা চায় দিতেই হয় মনে হলো এ নিয়ে বেশ গর্ববোধ করেন। জিজ্ঞেস করলাম তা ছেলের বয়স কত? প্রতিউত্তরে বললেন এই তো আট বছর হলো ওআচ্ছা বেশ, সাইকেল কেনার টাকা কখন পাঠাবেন? বললেন আজকেই বিকাশের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেব বললাম ভালই। ভাল না বলে কোন উপায় নেই এখন এই বাবাকে কোন ভাবেই আপনি বুঝাতে পারবেন না ,তবে সময় সুযোগ করে বুঝানোর চেষ্টা করব।

এবার মুল কথায় আসি উনি বিকাশে বাকীতে টাকা পাঠাবেন ছেলের শখ পুরন করতে, প্রথমত তার জন্য মাস শেষে তাকে এক্সটা পয়সা পে করতে হবে কারণ মাসের মাঝামাঝি সময় প্রবাসীদের হাতে টাকা থাকেনা এসময় বেশীরভাগই বাকীতে টাকা পাঠান পরে মাস শেষে বেতন পেয়ে কিছুটা বেশী দিয়ে পরিশোধ করেন। দ্বিতীয়ত, চাওয়ার সাথে সাথেই দেওয়াতে তার ছেলে এখন থেকেই বুঝে যাবে তার বাবা সুপারম্যান চাইলেই সবকিছু পাওয়া যায়। এই ছেলেটি দিনে দিনে বড় হবে তার নতুন নতুন চাহিদা বাড়বে আর বাবা যেকোন ভাবেই তা পুরণ করতেই ব্যাস্ত থাকবেন ছেলে কখনো জানতেই পারবে না বাবা কিভাবে তা যোগাড় করেছেন, এক সময় ছেলের মনে জন্ম নেবে সেও একদিন তার বাবার মত সুপারম্যান হবে কাড়ি কাড়ি টাকা কামাবে অবশেষে দেখা যায় একসময় সেই আদরের ছেলেটি হয়ে যায় প্রবাসী। প্রবাসে এসে ছেলেটি মুখোমুখি হয় কঠিন বাস্তবতার যখন খেয়ে না খেয়ে ১২-১৪ ঘন্টা গাধার মত খাটতে হবে তখন বুঝবে সুপারম্যানের আসল পাওয়ার। দেখাগেছে বেশীরভাগ প্রবাসীর ছেলেই প্রবাসীই হয় কারণ ঐ একটাই সুপারম্যান হবার স্বপ্ন। অনেক বাবার মুখে গল্প শুনেছি গাধার মত জীবনটা কাটিয়ে দিলাম ছেলেকে জজ ব্যারিষ্টার বানাবো দিনশেষে দেখা যায় ঐ বাবাই ধারকর্য করে কোনমতে একটা ভিসা যোগাড় করেন। আমার কাছে মনে হয় ছেলের এই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিতে বাবা পরোক্ষভাবে জড়িত আর এটা যখন বুঝতে পারেন তখন আর সংশোধনের সময় থাকেনা।

মুলকথা হলো প্রত্যেক বাবাই তার সন্তানের কাছে সুপার হিরো বাবা তার সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করেন সন্তানের শখগুলো পুরণ করতে তা প্রবাসে হোক বা দেশে। সন্তানের থেকে দূরে থাকার কারণে প্রবাসী বাবারা একটু বেশীই আবেগপ্রবণ হয়ে থাকেন এটা স্বাভাবিক বিষয় বাবা মায়ের জন্য সন্তান পৃথিবীর যে কোন কিছুর চাইতে গুরুত্বপূর্ণ, তবে মনে রাখতে হবে আগামীকে মোকাবেলা করতে হলে সন্তানকে বাস্তব ধারণা দিয়ে বড় করতে হবে তানাহলে সুপারম্যান হবার স্বপ্নে বিভোর হয়ে আদরের সন্তানকে কঠিন জীবনকেই বেঁচে নিতে হবে।


-শওকতুর রহমান


Comments

Popular posts from this blog

কবিতা প্রিয় স্বদেশ ফেরা- ভালবাসার বাংলাদেশ

আয়না- কবিতা আয়না

কবিতা- কোটা আন্দোলন