কবিতা ও গল্প

প্রিয় ঋতু হেমন্ত -শওকতুর রহমান ঋতু বদলের পালাক্রমে প্রিয় ঋতু হেমন্তের আগমন যখন ঘটে, মনের মাঝে অন্যরকম এক শিহরণ জাগে তাহার আগমনে। বৈচিত্র‍্য রুপের সাজে চারিদিকে হেমন্ত বিরাজ করে, নববধুর মত করে প্রকৃতিও তখন হলুদে সাজ সাজে। মাঠে সোনালী পাঁকা ধানের দোল খাওয়া দেখে দোলা লাগে প্রাণে, নবান্নের উৎসব জাগে কৃষাণ কৃষাণীর মনে। গ্রামের ঘরে ঘরে এই ঋতুতেই পিঠা-পুলি খাওয়ার ধুম পরে যায়, রকমারি পিঠার আহা কি স্বাধ! কৃষাণীর নিপুণ হাতের ছোয়ায়। গন্ধরাজ,মল্লিকা,শিউলি, কামিনী কিংবা ছাতিম বকফুল, এই ঋতুতে তাদের সুবাসে মাতোয়ারা হতে মন থাকে ব্যাকুল। সকালে শিশির ভেজা ঘাস আর কুয়াশায় শীতের আগমনী বার্তা দেয়, কখনও গরম আবার কখনও শীত শীত অনুভূত হয়। বাংলার ঋতুর রাণী খেতাবে ভূষিত এই অপরুপা হেমন্ত, রুপের মুগ্ধতায় মাতাল হয় প্রকৃতি,মানুষের মনে বেড়ে যায় আনন্দ। কোন এক হেমন্তকালে এই ধরণীতে ঘটেছিল অধমের আগমন, তাই বুঝি হেমন্তের সাথে এই সখ্যতা তার পরশে জুড়ায় মন প্রাণ।

অপরাধবোধ -শওকতুর রহমান কত বিকল্প থাকার পরও সে আমাকেই বেছে নিয়েছিল বেসেছিল ভালো, তা নিয়ে কত মানুষের কটুকথা শুনতে হয়েছিল তাকে,কিন্তু কর্ণপাত করেনি কখনো।  নি:স্বার্থভাবে কেউ কাউকে ভালবাসতে পারে তাকে দেখার আগে ছিল না জানা, কেউ তাকে দমাতে পারতো না যদি না করিতাম আমি মানা। সামনে পড়লে অশ্রুসিক্ত চোখে যখন আমার দিকে তাঁকায়, সেই চাহনি দেখে আমার অন্তর কাঁপে কলিজা ফেঁটে যায়। অদৃশ্য এক শৃংখলে আজ আমি বাধা পড়ে আছি, চাইলেই যা ছিন্ন করার সাধ্য আমার নেই।  আমিতো এমন চাইনি কখনো আমার দ্বারা কেও কষ্ট পাবে, তবু কেন বার বার আমিই কষ্টের কারণ হই! আমার কারণে কেন অশ্রু ঝড়ে তাহার চোখে? আমি অপরাধী কারো মন ভেঙেগ দেবার অপরাধে । ভাগ্যের কাছে পরাজিত হয়ে হারিয়েছি তাকে,  উপলব্দি হয় মুল্যবান কিছুই খোয়া গেছে জীবন থেকে। এত বছর হয়ে গেল আজও তাকে দেখার জন্য মনের কি এক ব্যাকুলতা, আড়াল থেকে চুপিচুপি দেখে তাতেই আজ তৃপ্তি খুঁজে মন! মুখোমুখি হয়ে চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস আজ নেইতো, ঐ চোখের চাহনি বুকে এসে বিঁধে ধনুকের ন্যায় করে দেয় ক্ষত। এতটা বছর কেঁটে গেছে আমা...

প্র বাসীদের নানান আত্বত্যাগের কথা আমরা গল্প, নাটক বা সিনেমায় দেখে থাকি কিন্তু প্রবাসীর বউদের আত্বত্যাগের কথা আড়ালেই থেকে যায়। পরিবারকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে একজন প্রবাসী যেভাবে ত্যাগ স্বীকার করেন পাশাপাশি একজন প্রবাসীর বউকেও অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। আমাদের সমাজে কিছু সংখ্যক পরিবারে দেখা যায় প্রবাসীর বউদের কারণে সংসারে অনেক ঝামেলার সৃষ্টি হয় বা স্বামী প্রবাসে থাকার কারণে সংসারে নিজের কতৃত্ব প্রতিষ্টা করতে চান আবার অন্যদিকে বেশীরভাগ পরিবারেই তার উল্টোটা দেখা যায় স্বামীর রেখে যাওয়া আমানত সংরক্ষন করতে গিয়ে অনেক লাঞ্চনা আর বঞ্চনার স্বীকার হতে হয় প্রবাসীর বউকে, নিজের শখ আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে পরিবারকে ভাল রাখার জন্য হাড় খাটুনি পরিশ্রম করে থাকেন। স্বামীবিহীন নারীকে শশুর,শাশুড়ী,দেবর,ননদ,সন্তানদের নিয়ে ভাল থাকার অবিরাম নিরব যোদ্ধ, আজকের কবিতাটি সেই সব নীরব যোদ্ধাদেরকে উৎসর্গ করে লিখা। প্রবাসীর বউ -শওকতুর রহমান প্রবাসীর বউদের চাইতে সুখে কেহ নেই,  এমন কথা প্রায়ই শুনি বলতে অনেকেই! ইচ্ছেমতো শপিং করে কেনে দামী শাড়ি, প্রবাসীর বউ হয়ে ধন্য এই নারী। একাউন্টে কাড়ি কাড়ি টাকা আর সোনার গহনা, চাই...

  বাবা -শওকতুর রহমান সেদিন কালো মেঘে ঢেকে গিয়েছিল আমার আকাশ, অন্ধকারে আচ্ছন্ন পৃথিবী স্তব্ধ ছিল চারপাশ। বাবা অসময়ে তোমার চলে যাওয়াটা দুচোখে দেখেছিলাম ঘোর অন্ধকার, কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না তুমি নাই এই ধরণীতে আর। কতদিন হয়ে গেল আজও অসহায় আমি তুমি ছাড়া,   মাঝে মাঝে হয়ে যাই পথহারা। পথের দিশা পাইনা খুঁজে আঁকাবাঁকা পথে হাঁটি, তুমি হলে বলতে ডেকে চিন্তা কিসের আমিতো আছি। বাবা কিভাবে জানি মনের কথাগুলো তুমি বুঝতে,  বলার আগেই তা বুঝে নিতে! সমাধান তাৎক্ষণিক যা এখন আর কেউ পারেনা দিতে। সিদ্ধান্ত নেবার সময় যখন আসে, সঠিক কিংবা ভুল বলার মত কেউ থাকেনা পাশে! একা একা দিচ্ছি পাড়ি এই মহাসমুদ্র, তুমি ছাড়া নিজেকে লাগে বড়ই ক্ষুদ্র। এত অল্প বয়সেই বড় হাঁপিয়ে গেছি, শত জটিলতার মাঝে বিচলিত হতে দেখিনি কখনো, সর্বদা অবিচল বট বৃক্ষের ন্যায় দেখেছি।  মাথার উপর সুর্যের আলোটা এখন বড় তেজী মনে হয়, ছাতা হয়ে ছিলে বাবা কভু এই আলোর ছিলনাতো ভয়। এমন যত্ন করে সন্তানকে আগলে রাখার মত বাবা কজনার ভাগ্যে জুটে, সার্থক জন্ম আমার এমন বাবা পেয়েছিলাম বলে। কৃতজ্ঞতা আর শতকুটি শুকরিয়া ঐ দয়াময়ের দর...

প্রবাসীর কষ্ট - শওকতুর রহমান আমি ছিলাম আপনজন সবার কাছে তার নিজের চাইতেও আপন, আমার  মনে কষ্ট লাগে এমন কথা বলা ছিল বারণ। সবাই বেশ সমীহ করত সুন্দর লাগত সবারই কথা, তাদের কথায় আনন্দ ছাড়া কখনও পাইনি মনে ব্যাথা। মধুর মধুর কথা শুনে গলে যেত মন, যা কিছু ছিল অর্জন সবি তাদের তরে করেছি সমর্পণ। হঠাৎ একদিন নোটিশ এলো চাকরি আর নেই, মনে মনে ভাবলাম এবার একসাথে থাকব মিলে সকলেই। দেশে আসছি খুব শীঘ্রই বললাম যখন ফোনে, কারো মুখেই হাসি নেই আসব বাড়ী শুনে। বাড়ি এসে দেখতে পেলাম সবার মুখই ভার, কবে আবার ফিরছি কাজে সেই প্রশ্নই সবার। সবার ভীষন মন খারাফ টাকার মেশিন হয়ে গেছে নষ্ট, ভালভাবে কথা বলতেই যেন হচ্ছিল তাদের কষ্ট। টাকায় আমায় মান দিয়েছিল মুল্য বেড়েছিল মতামতে, আজ সবি হারিয়ে গেছে আমার চাকরির সাথে। টাকার দরকার পড়লেই কেবল আমার কদর বেড়ে যেত, এ কথাটি বুঝতেই আমার আধা জীবন গেল। ব্যাংক ভরা আছে টাকা স্বীকার করছি না, আশেপাশের লোকের কাছে এমন কথা প্রায়ই যায় শোনা। তাদের কথায় মনে হয় প্রবাসে টাকা গাছে ধরে, গাছের গোড়ায় ঝাড়া দিলে টপটপ করে পড়ে। প্রবাসের প্রতি দিনকে মাস আর মাস কে মনে হত বছর, কিভাবে কাঁটলো দিন একবারও কেউ নিলো না স...

প্রিয় স্বদেশ ফেরা - শওকতুর রহমান বিদেশের চাকচিক্য আর আভিজাত্য দেখে দেখে যখন ফেরা হয় নিজ দেশে, এয়ারপোর্টের বাইরে বেরুলেই সবকিছু কেমন যেন পুরনো পুরনো লাগে।  ফ্লাইওভার ফুটপাত সবই আছে বিদেশেরই মত,  অযত্নে পড়ে আছে সব দেখার কেউ নেইতো। রাস্তায় নেই কোন শৃঙ্খলা নিয়মের তোয়াক্কা করছেনা  কেউ, চলছে সবাই যার যার মত করে ঘটনা ঘটে আবার শেষ হয়ে যায় নিমিষেই।  খোদ রাজধানীতেই গাড়ির হর্ন আর ধুলুবালিতে একাকার সব,  মাঝে মাঝে ধুলুর কারণে দেখাই যায় না পথ। অসময়ে রাস্তার সংস্কার খুড়োখুড়িতে সৃষ্ট এই যানজট, এলোমেলো গাড়ির জটলা আর মানুষের শোরগোলে অস্থির রাজপথ। এতকিছুর মাঝেই যখন মাটির ঘ্রাণ নাকে ভেসে আসে, রাস্তার ঐ রঙ যাওয়া গাড়িটাও দেখতে ভালই লাগে। মনের মাঝে অন্যরকম শিহরণ জাগে যেমনটা প্রেমে পড়লে, হাজার ভুল থাকলেও তা আর চোখে পড়েনা, ঠিক তেমনি দেশের মায়ায় চাপা পড়ে অভিমান, সুন্দর লাগে যে সবি, গেয়ে উঠে মন সকল দেশের রাণী তুমি আমার জন্মভূমি। রাস্তার দু পাশে সবুজের সমারোহ দেখে আনন্দের নেইতো কোন শেষ, মনে হয় এইতো আমার ভালবাসার প্রিয় বাংলাদেশ।  যার টানে নরম বিছানায় কতরাত ঘুমহীন কেঁটেছে আমার, যা...

যারা প্রবাসে আসছেন বা আসবেন কথাগুলো তাদের জন্য! প্রবাসে আসার আগে প্রস্তুতি : বর্তমানে যুব সমাজ প্রায় সবাই বিদেশমুখী জরীফে দেখা গেছে তার প্রধান কারণ লেখাপড়া শেষ করে দেশে কিছু করে সফল হওয়াটা বেশ কঠিন তাই অনেকেই মনে করেন দেশ থেকে প্রবাসে ক্যারিয়ার গড়াটা অনেক সহজ,তবে দেশে থেকে প্রবাসে ক্যারিয়ার গড়া যতটা সহজ মনে হয় বাস্তবে কিন্তু এতটা সহজ নয় প্রথমত,প্রবাসে নিজের লোক না থাকলে এখানে এসে দূর্গতির সীমা থাকে না, দালালদের লোভনীয় কথায় প্ররোচিত হয়ে বিদেশে এসে অনেকেই হয়েছেন লাঞ্চিত সবকিছু হারিয়ে অমানুষিক নির্যাতনে শূণ্য হাতে ফিরে গেছেন হয়েছেন ভিটেছাড়া, তাই এ বিষয়ে আসার আগে নিশ্চিত না হয়ে কারো কথায় প্ররোচিত হওয়া যাবে না। দ্বিতীয়ত, অনেকেই ভেবে বসে থাকেন কোনভাবে বিদেশ যেতে পারলেই হলো ঐখানে গিয়ে কোন না কোন কাজ যোগাড় হয়ে যাবে এটা মারাত্মক একটি ভুল ধারণা কারণ কাজ না জানা লোককে কেউ চাকরিতে নিতে চায় না কোনভাবে যদি কাজ পেয়ে যায় তা হয় নিম্নপর্যায়ের যা করা অনেক কাষ্টসাধ্য। তাই যারা আসতে চান তাদের জন্য দুইটি উপদেশ দীর্ঘ প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে যা দেশ ছাড়ার আগে নিশ্চিত করা চাইই চাই। ১. আপনার সিভিতে লেখার...